যে নামাজে মুসল্লিদের চাওয়াগুলো পূরণ হয়


আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক উন্নয়নের সেরা সময় নামাজ। নামাজের সেজদায় আল্লাহর সবচেয়ে কাছিকাছি হওয়া যায়। এ সময় মানুষ নিজেদের চাওয়া-পাওয়াগুলো আল্লাহর কাছে তুলে ধরে। তবে বিশেষ একটি নামাজে আল্লাহ তাআলা মুসল্লির চাওয়াগুলো পূরণ কর দেন। কী সেই নামাজ?

রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সেরা নফল ইবাদত। মর্যাদা ও ফজিলতের দিক থেকে ফরজ নামাজের পরই তাহাজ্জুদ নামাজের অবস্থান। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’

রাতের নামাজ তাহাজ্জুদের ঘোষক স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। রাতের শেষাংশে মহান রব দুনিয়ার আকাশে নেমে মানুষকে নামাজের জন্য, তাঁকে ডাকার জন্য, ক্ষম প্রার্থনার জন্য আহ্বান করেন। হাদিসে এসেছে-

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকবে যে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে যে আমি তাকে তা দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে যে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বুখারি, মুসলিম)

মহান আল্লাহ রাতের নামাজের গুরুত্ব কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-

اِنَّ نَاشِئَۃَ الَّیۡلِ هِیَ اَشَدُّ وَطۡاً وَّ اَقۡوَمُ قِیۡلًا

নিশ্চয়ই রাতের বেলার জেগে উঠা আত্মসংযমের জন্য বেশি কার্যকর এবং স্পষ্ট কথা বলার জন্য বেশি উপযোগী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল : আয়াত ৬)

وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا –  وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا

‘আর রাহমান-এর বান্দা তারাই, যারা জমিনে অত্যন্ত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা তাদেরকে (অশালীন ভাষায়) সম্বোধন করে, তখন তারা বলে, সালাম; আর তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের রব-এর উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৬৩-৬৪)

তাহাজ্জুদ রাতের নামাজ। ফরজের পর আল্লাহ তাআলা রাতের নামাজের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করেছেন। তাই মুমিন মুসল্লির কাছে রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ-এর গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়

তাহাজ্জুদ নামাজ রাতে পড়তে হয়। এটি এশার নামাজ আদায় করার পর থেকে ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ফজরের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে পড়তে হয়। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ অর্ধ বা দ্বিপ্রহরের সময় পড়া ভালো। সর্বোত্তম হচ্ছে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়া।

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তবে অধিকাংশ স্কলারদের মতে, তাহাজ্জুদ সর্বনিম্ন দুই রাকাত আর সর্বোচ্চ আট রাকাত। এর বেশিও পড়া বৈধ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও ৪ রাকাত, কখনও ৮ রাকত এবং কখনও ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়তেন। কিন্তু যদি কেউ রাতে এশার পর থেকে শেষ রাতের মধ্যে ২ রাকাত নামাজ পড়ে তবে তা তাহাজ্জুদ আদায় হবে। হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার পর দুই বা ততোধিক রাকাত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফজিলতের অধিকারী।

তাহাজ্জুদ নামাজ কীভাবে পড়বেন?

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সুরা বা নিয়ম নেই। অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের মতো রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ পড়তে হয়। সুরা ফাতেহার সঙ্গে যে কোনো সুরা মিলিয়ে এ নামাজ পড়া যায়। তবে উত্তম হলো দীর্ঘ বা লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। যদি কারও বেশি আয়াত বা লম্বা সুরা মুখস্ত থাকে তবে তাদের জন্য লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। কারণ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় বড় বড় সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাই সবার উচিত, বড় সুরা মুখুস্ত করে তা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

মনে রাখতে হবে

রাতের নামাজ তাহাজ্জুদ এতোই মর্যাদাবান যে, এ নামাজ পড়া মুসল্লির দোয়া বা চাওয়া-পাওয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। আল্লাহ তাআলা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন। দোয়া ও মনের আশা কবুল করে নেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জুমার দিনের ৫ আমল ও সওয়াব


জুমার দিন মুসলমানের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত। দিনটির রয়েছে বিশেষ ৫টি আমল। এ আমলগুলো মর্যাদা ও ফজিলতও অনেক। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিনের কী আমল ও প্রতিদান ঘোষণা করেছেন?

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমরাই সর্বশেষ আগমনকারী এবং কিয়ামাতের দিন আমরাই প্রথম। যাদের জন্য (হিসাব-কিতাব ও জান্নাতে প্রবেশের) আদেশ সমস্ত সৃষ্টির পূর্বে দেয়া হবে। এ দিনের ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-

’হে ঈমানদারগণ! জুমার দিন নামাজের জন্য যখন তোমাদের আহ্বান করা হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। ইহা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝ। ‘অতপর যখন নামাজ শেষ হয়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা (উত্তম রিজিক ও নেয়ামত লাভে) সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯-১০)

বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ আমল

জুমার দিনের অনন্য আমল হলো- এ দিনের একটি আমলেই মিলবে হাজার বছরের নামাজ-রোজার সওয়াব। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ৫টি কাজ করার মাধ্যমে ১টি আমল করবে। অর্থাৎ জামআর নামাজ পড়তে আসবে। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির মসজিদে আসার প্রতি কদমে (পদক্ষেপে) ১ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব দান করবেন। (সুবহানাল্লাহ!) তাহলো-

১. জুমার দিন গোসল করা।

২. আগে আগে মসজিদে আসা।

৩. পায়ে হেঁটে মসজিদ আসা।

৪. ইমামের কাছাকাছি বসা। এবং

৫. মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা।

আমলের সওয়াব

জুমার দিন এ পাঁচটি কাজের আমল করলে আল্লাহ তাআলা জুমা আদায়কারী ওই ব্যক্তির প্রতি কদমে (পদক্ষেপে) ১ বছরের আমলের সওয়াব দেবেন।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আমলের সওয়াবের বর্ণনাও দিয়েছেন অন্য হাদিসে। তাহলো- ১ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব।

বাড়ি থেকে মসজিদে আসতে যে কয় কদম হেঁটে আসবে, ওই ব্যক্তি তত বছর নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াবের অধিকারী হবেন।

ধরা যাক-

কোনো ব্যক্তির বাড়ি থেকে মসজিদে আসতে ১০০ কদম হাটা লাগে। ওই ব্যক্তি যদি উল্লেখিত ৫ কাজ মেনে জুমার দিন আমল করে তবে তার আমল নামায় ১০০ বছরের নফল নামাজ ও নফল রোজার সওয়াব যোগ হবে।

হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে- জুমার দিনের এ আমলের সুযোগের চেয়ে বেশি আমলের সুযোগ লাভের আর কোনো দ্বিতীয় মাধ্যম নেই।

বিখ্যাত তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব বলেন, ‘আমার কাছে নফল হজ করার চেয়ে বেশি উত্তম শুক্রবারের আমল করা।’

মুসলিম উম্মাহর জন্য নসিহত হলো-

জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে মুসলমানগণ যথাযথ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মাধ্যমে এ দিনটিকে ইবাদাত-বন্দেগির দিন হিসেবে পালন করে থাকে।

তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র তার ইবাদাত-বন্দেগির জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এ মহত্বের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আল্লাহ তাআলা ইবাদাত-বন্দেগির সাপ্তাহিক অনুশীলনের জন্যই জুমার দিনটিকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের হক আদায়ে আজানের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততার সহিত নামাজ আদায়ে মসজিদ পানে ছুটে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। ইবাদাত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নিজেদেরকে আল্লাহ বন্দেগিতে নিযুক্ত রাখতে নিজেদেরকে সেভাবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

জুমার দিন যাদের জন্য কল্যাণময়


ইয়াওমুল জুমা, গরিবের হজের দিন। মুসলমানের খুশির দিনও। ঈমানদারের ঈমান বৃদ্ধি দিন। তাই ছোট বড় সবার জন্য আনন্দ-উৎসবের সঙ্গেই জুমার দিন অতিবাহিত করা জরুরি। আগে আগে মসজিদে যাওয়া জরুরি। দিনটি অনেক পুরস্কার ও কল্যাণে ভরপুর। এ দিনটির রয়েছে অনেক সুখবর ও পুরস্কারের ঘোষণা। কী সেসব পুরস্কার ও কল্যাণ?

জুমার দিন পরিবারের বড়দের হাত ধরে ছোট সদস্যরাও মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। যে দৃশ্য মহান আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত থাকে। কেননা এ দৃশ্যের অবতারণা করতে আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করেন-

’হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)

আল্লাহর নির্দেশ মেনে যারা জুমার নামাজ আদায় করে তাদের জন্য হাদিসে ঘোষিত চমকপ্রদ পুরস্কারও রয়েছে। তাহলো-

১. দোয়া কবুল

জুমার দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে যে মুহূর্তে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। তবে মুহূর্তটিকে অজ্ঞাত করে রাখা হয়েছে। যাতে মানুষ পুরো জুমার দিনটিকে গুরুত্বসহকারে অনুসন্ধান করতে থাকে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো বান্দাহ ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে তবে আল্লাহ তাআলা তা অবশ্যই দেবেন। (বুখারি ও মুসলিম)

সময়টি কখন

জুমার দিনের এ বিশেষ সময়ের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। তবে হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দুটি মত রয়েছে। তাহলো-

> ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময় হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম মিম্বারে বসা থেকে নিয়ে সালাত শেষ করা পর্যন্ত।’ (মুসলিম, ইবনু খুজাইমা, বয়হাকি)

> যাদুল মাআ`দ-এ বর্ণিত আছে- মুহূর্তটি হচ্ছে জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর।

২. সাদকা করার দিন

সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনা জুমার দিন সাদকা করা ঐ রকম উত্তম, যেমন সারা বছর সাদকা করার চেয়ে রমজান মাসে সাদকা করা উত্তম। হজরত কা`ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘জুমার দিনই সাদকা করা অন্যান্য দিন সাদকা করার তুলনায় অধিক সাওয়াব ও গুরুত্বপূর্ণ।’ (মুসলিম)

৩. আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন

 জুমার দিন জান্নাতিদের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা সাক্ষাৎ করবেন। তাফসিরে এসেছে- আল্লাহ তাআলা  প্রতি জুমা`র দিন  জান্নাতিদের সাক্ষাতের জন্য প্রকাশ্যে আসেন।

৪. সাপ্তাহিক ঈদের দিন

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এটি ঈদের দিন। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি জুমার নামাজে উপস্থিত হয়, সে যেন অজু করে উপস্থিত হয়।’ (ইবনু মাজাহ)

৫. ক্ষমা পাওয়ার দিন

এদিন আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোলস করল, যথাযথ পবিত্রতা অর্জন করল, তেল লাগাল এবং ঘর থেকে আতর খুশবু লাগিয়ে বের হল, দুই ব্যক্তির মাঝে ফাঁক করে সামনে গেল না। অতপর তার তকদিরে যত নামাজ পড়া নির্ধারিত ছিল তা পড়ল, ইমামরে খুতবার সময় চুপ থাকল, তাহলে তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সংঘটিত গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি)

৬. বছরজুড়ে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব পাওয়ার দিন

জুমার দিনের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে সাওয়াবের ভাণ্ডার। যারা যথাযথ আদব রক্ষা করে জুমার নামাজ আদায় করে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তাদের জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সাওয়াব লেখা হয়। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আউস আস সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমাআর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, আগে আগে মসজিদে যায় এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কোনো কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সাওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৭. জাহান্নামের আগুন বন্ধ থাকার দিন

যাদুল মাআদে এসেছে- সপ্তাহের প্রতিদিন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। জুমার দিনের সম্মানে এদিনটিতে জাহান্নামের আগুনকে প্রজ্জলিত বা উত্তপ্ত করা হয় না।

৮. জুমার দিন বা রাতে কল্যাণের

জুমার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করা উত্তম পরিণতির লক্ষণ। কারণ এ দিন বা রাত যে ব্যক্তি মারা যায় সে ব্যক্তি কবরের আজাব বা মুনকার নকিরের প্রশ্ন থেকে বেঁচে যায়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলিম জুমার দিন বা জুমার রাতে মারা গেল; আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে কবরের আজাব থেকে রেহাই দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)

মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন ও রাতের সময়গুলোকে কাজে লাগানো। কোনো সমস্যা না থাকলে যথাযথভাবে জুমার নামাজ আদায় করা। হাদিসে ঘোষিত জুমার ফজিলত ও মর্যাদাগুলো নিজেদের করে নেয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের বিশেষ আমলগুলো করার মাধ্যমে ঘোষিত পুরস্কার ও প্রতিদান পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সুরা ইখলাস পড়ার অসামান্য ফজিলত


সুরা ইখলাস। ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ একটি সুরা। পবিত্র কোরআনের ১১২তম সুরা এটি। যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুরায় তওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার পর আল্লাহর সন্তান-সন্ততি আছে বলে যে ভ্রান্ত ধারণা করা হয় তার প্রতিবাদ করা হয়েছে। এই সুরাতে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও সত্ত্বার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি কোরআনের অন্যতম ছোট সুরা হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে।

সুরা ইখলাসকে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান বলা হয়। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরাগ, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস, খাঁটি আনুগত্য। শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে ইখলাস বলা হয়।

মুশরিকরা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর বংশপরিচয় জিজ্ঞাসা করেছিল। যার জবাবে এই সুরা নাজিল হয়। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে এসেছে যে, তারা আরও প্রশ্ন করেছিল আল্লাহ তাআলা কিসের তৈরি। সোনা-রুপা অথবা অন্য কিছুর? এর জবাবে সুরাটি অবতীর্ণ হয়েছে।

সুরা ইখলাসের ফজিলত অনেক। সুরা ইখলাস যিনি ভালোবাসবেন তিনি জান্নাতে যাবেন। হাদিসে এসেছে এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে আরজ করলেন, আমি এই সুরাকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন সুরা ইখলাসের প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে।

সুরাটি কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। হাদিসে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা সবাই একত্র হয়ে যাও আমি তোমাদের কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ শোনাব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাস পাঠ করলেন।

হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় আছে, সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে আমির বা নেতা নিযুক্ত করে দেন। তিনি নামাজে ইমামতিকালে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা শেষে প্রতি রাকাতেই সুরা ইখলাস পাঠ করতেন।

সুরা ইখলাস হচ্ছে তওহিদের শিক্ষা। ইসলামের মর্ম হচ্ছে তওহিদ। এ সুরায় শেখানো হয় আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কাউকে জন্ম দেননি তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি কোনো কিছুর সমতুল্য নন তিনি। কোরআন শরিফ আমাদের তিনটি মৌলিক জিনিস শেখায় এ সুরা। তাহলো- তওহিদ, আখিরাত ও রিসালাত। অর্থাৎ আল্লাহ পরকাল ও অহি। অন্য যে কোনো বিশ্বাস এই তিনটার মধ্যে পড়ে যায়। আল্লাহ, আখিরাত এবং আল্লাহর প্রেরিত ওহির প্রতি বিশ্বাস। যখন আমরা বলি আল্লাহকে বিশ্বাস করি এর মধ্যে আল্লাহর সব নাম সব গুণ কাজকে বোঝায়। যখন বলি আখিরাতে বিশ্বাস তার মধ্যে কবরের জীবন বিচার দিবস জান্নাত জাহান্নাম-সব এসে যায়।

সুরা ইখলাম পাঠে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না।

সুরা ইখলাস বিপদ-আপদে উপকারী। হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে তাকে বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তা যথেষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমানোর আগে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ…, কুল আউজু বি-রাব্বিল ফালাক…, কুল আউজু বিরাব্বিন নাস… পড়ার কথা বলেন।

হজরত আয়েশা রাদিয়া্লাহু আনহা বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তাঁর দুই হাতের তালু একত্র করতেন তারপর সেখানে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে শরীরে যতটুকু সম্ভব হাত বুলিয়ে দিতেন। এভাবে তিনবার করতেন।

সুরা ইখলাস দারিদ্র্যতা দূর করে দেয়। হজরত সাহল ইবন সাদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করল নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছুদিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়।

১.  যে ব্যাক্তি একবার সুরা ইখলাস পাঠ করলো, সে কোরআন কারিমের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করার সওয়াব লাভ করলো ।

২.  যে ব্যাক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করলো, আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতি হাতে জান্নাতের মধ্যে তার জন্য বিশেষ মর্যাদাশীল মহল তৈরি করবে।

৩. যে ব্যাক্তি অধিক পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন।

৪. যে ব্যাক্তি অধিক পরিমাণে সুরা ইখলাস পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য লাশ বহন করার জন্য হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। ফেরেশতারারা তার লাশ বহন ও জানায়াই শরিক হবেন।

সুরা ইখলাস

قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ  اَللّٰهُ الصَّمَدُ  لَمۡ یَلِدۡ  وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ  وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ

অর্থ: ‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও ওপর মুখাপেক্ষী নন বরং সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর কোনো সন্তান নেই এবং তিনি কারও সন্তানও নন এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’

ইসলামের মূল জিনিসটাই হচ্ছে তওহিদ। এ সুরায় শেখানো হয় আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কাউকে জন্ম দেননি তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি কোনো কিছুর সমতুল্য নন তিনি। কোরআন আমাদের তিনটি মৌলিক জিনিস শেখায়-তওহিদ, আখিরাত ও রিসালাত। আল্লাহ ,পরকাল ও অহি। অন্য যেকোনো বিশ্বাস এই তিনটার মধ্যে পড়ে যায়। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের বিশ্বাস, আল্লাহর প্রেরিত অহির প্রতি বিশ্বাস।

যখন আমরা বলি আল্লাহকে বিশ্বাস করি এর মধ্যে আল্লাহর সব নাম সব গুণ কাজকে বোঝায়। যখন বলি আখিরাতে বিশ্বাস তার মধ্যে কবরের জীবন, বিচার দিবস, জান্নাত জাহান্নাম সব এসে যায়। তো এভাবে যদি চিন্তা করি তাহলে বোঝা যায় বিশ্বাসের এক-তৃতীয়াংশই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের কথাই বর্ণিত হয়েছে এই সুরাতে।

আপনি যদি শুধু বোঝেন যে এই সুরাতে কী বলা হয়েছে, তাহলে দ্বীনের পথচলা শুরু করার মূলটা আপনি ধরতে পেরেছেন। সহিহ হাদিসে এসেছে, সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন তেলাওয়াতের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যায়।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক রেওয়ায়েতে উল্লেখ আছে এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে আমির বা নেতা নিযুক্ত করে দেন। তিনি নামাজে ইমামতিকালে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা শেষে প্রতি রাকাতেই সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে লোকেরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে তিনি তাঁকে ডেকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তিনি উত্তর দেন যে এই সুরায় আল্লাহর পরিচয় পাই, তাই এই সুরাকে ভালোবাসি। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন তাহলে আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসেন।

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ ইমানের সঙ্গে করতে পারবে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। ১. যে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে। ২. যে ব্যক্তি গোপন ঋণ পরিশোধ করবে। এবং ৩. যে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১০ বার সুরা ইখলাস পাঠ করবে।

সুরা ইখলাস পাঠকারীর জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। সুরা ইখলাসের দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা ‘সমাদ’ অমুখাপেক্ষী। ‘সমাদ’ বলা হয় এমন এক সত্তাকে যিনি সর্ব গুণাবলিতে পরিপূর্ণ। সব সৃষ্টি যার দিকে মুখাপেক্ষী। তিনি সবার থেকে অমুখাপেক্ষী। তার মৃত্যু নেই। তিনি কারও উত্তরাধিকারী নন। বরং আকাশ-জমিনের সব উত্তরাধিকার তার। তিনি না ঘুমান, না উদাসীন হন। তার নেতৃত্ব সর্বময়। জ্ঞানে প্রজ্ঞায় ধৈর্যে ক্ষমতায় সম্মানে। এক কথায় সব গুণাবলিতে তিনি মহান। তিনি এমন সত্ত্বা, প্রয়োজনের সময় সব মাখলুক যার দিকে মুখাপেক্ষী হয়।

আর তিনি একাই সবার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। সমাদ নাম বান্দার মধ্যে তার ক্ষমতা সম্মান এবং সবকিছু থেকে তার অমুখাপেক্ষীতার অনুভূতি তৈরি করে। ফলে বান্দার বিশ্বাস স্থির হয়ে যায়, আল্লাহই তার বান্দার জন্য যথেষ্ট। তিনি তার একান্ত গোপন বিষয় শোনেন। তার অবস্থানও লক্ষ্য করেন। সারা পৃথিবী মিলে তার কোনো ক্ষতি করতে চাইলে ততটুকুই পারবে যতটুকু তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন।

ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ সুরা ইখলাস। আল্লাহর ভালোবাসা ও নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতের প্রসাদ পেতে নিয়মিত সুরা ইখলাসের আমল করা জরুরি। এতে যেমন ঈমান হবে পরিপূর্ণ তেমনি পরকালের পুরস্কার হবে সুনিশ্চিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ইখলাসের আমল বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নবিজি (সা.) দুপুরের যে ইবাদতকে বেশি গুরুত্ব দিতেন


দ্বিপ্রহরের সময় জোহরের আজান শুনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তেন। এ নামাজ তিনি ঘরেই পড়তেন। আর তিনি এসময় তার আমলনামা আসমানে ওঠে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও করতেন। তাঁর কাছে এ সময়ের ইবাদত ছিল খুবই মূল্যবান।

যখন সূর্য কিছুটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে। তখন মাসজিদ থেকে হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর কণ্ঠে জোহরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসতো। তার জোহরের আজানের পর ৪ রাকাত নামাজ পড়ার মাধ্যমে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বিপ্রহর শুরু হতো।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তন্দ্রায় থাকলে আজান শুনে জেগে উঠতেন। আজানের শব্দগুলো পুনরাবৃত্তি করে জবাব দিতেন। ওজুর প্রয়োজন হলে ওজু করে বাড়িতেই পড়ে নিতেন চার রাকাত সুন্নত। নবিজি বলতেন, ‘এই সময়ে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে যায়। এমন সময়ে আমার একটা ভালো আমল আসমানে উঠুক সেটা আমার খুব পছন্দ।’

অনেকেই জোহরের এই ৪ রাকাত সুন্নত নামাজের ব্যাপারে উদাসিন। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ৪ রাকাত সুন্নত নামাজের মাধ্যমে দ্বিপ্রহরের ইবাদত শুরু করতেন। আর আকাঙ্ক্ষা করতেন তাঁর এই সময়টায় আমল যেন আসমানে উঠে যায়।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই আকাঙক্ষা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, দ্বিপ্রহরের শুরুতে ৪ রাকাত নামাজ পড়ার গুরুত্ব কতবেশি।

তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, জোহরের শুরুতে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া। একান্তই কেউ ফরজের আগে পড়তে না পারলে পরে দুই রাকাত সুন্নত পড়া এবং তারপর চার রাকাত সুন্নত আদায় করে নেওয়া। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় জোহরের ৪ রাকাত সুন্নত পড়ার বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা ওঠে এসেছে-

১. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জোহরের আগে চার রাকাত সুন্নত ও জোহরের পর দুই রাকাত সুন্নত পড়তেন।’ (তিরমিজি ১/৫৫০)

২. হজরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জোহরের আগে এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, জাহান্নামের আগুন আল্লাহ তাআলা তার ওপর হারাম করে দেবেন।’ (তিরমিজি ১/৫৫৩)

৩. হজরত আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি আমার বোন উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে (প্রিয় নবিজির সা. স্ত্রী) এ কথা বলতে শুনেছি যে, ‘আমি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জোহরের নামাজের আগে এবং পরে চার রাকাত সুন্নত নামাজ এর পূর্ণ খেয়াল রাখবে (নিয়মিত আদায় করবে), মহান আল্লাহ তাআলা তার থেকে জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। (তিরমিজি ১/৫৫৪)

৪. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনি কখনই জোহরের আগের চার রাকাত সুন্নত ও ফজরের আগের দুই রাকাত সুন্নত ছাড়তেন না।’ (বুখারি ১১৮২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জোহরের ফরজের আগের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ নিয়মিত পড়ার তাওফিক দান করুন। অবহেলা করে তা ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ধারাবাহিক ৭ নিয়মে সম্পন্ন হয় ‘ফরজ গোসল’


ধারাবাহিক সাতটি কাজ করার মাধ্যমে ফরজ গোসল সম্পন্ন হয়। আবার ৪টি কাজ থেকে বিরত হওয়ার পর ফরজ গোসল করতে হয়। ফরজ গোসল সম্পন্ন হওয়ার ধারাবাহিক ৭ নিয়ম ছাড়াও গোসল ফরজ হওয়ার কাজগুলো কী?

যে কাজে গোসল ফরজ হয়

চারটি কারণ পাওয়া গেলে গোসল ফরজ হয়। এ ৪টি কারণের যে কোনে একটি সংঘটিত হলেই গোসল করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। এগুলো হলো-

১. জানাবাত থেকে পবিত্রতা হওয়ার গোসল। এটি নারী-পুরুষের যৌন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে গোসল করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন-

وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُواْ

‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ৬)

২.  নারীদের মাসিক (ঋতুস্রাব) বন্ধ হওয়ার পর পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।

৩.  নারীদের সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।

৪. জীবতদের ওপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।

গোসলের সময় তিন কাজ করা আবশ্যক

অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে ৩টি কাজ করা আবশ্যক। যথাযথভাবে কাজ ৩টি না করলে ফরজ আদায় না। কাজ তিনটি হলো-

১.  কুলি করা । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)

২.  নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)

৩. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)

ধারাবাহিক ৭ নিয়মে ফরজ গোসল সম্পন্ন করা উত্তম। তাহলো-

১. গোসলের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।

২. দুই হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।

৩. লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিস্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এতে নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।

৪. নাপাকি ধোয়া। কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।

৫. ওজু করা। পা ধোয়া ছাড়া নামাজের অজুর ন্যয় অজু করে নেওয়া।

৬. এরপর ফরজ গোসলের তিন কাজ-  কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং ‍পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।

৭. সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসল করার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার এবং যথাযথভাবে গোসল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যে তাসবিহ শুকনো পাতার মতো মানুষের গুনাহ ঝরিয়ে দেয়


হজরত আনাস ইবনু মালিক দিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি শুকনা পাতাওয়ালা গাছের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তার লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করলে হঠাৎ পাতাগুলো ঝরে পরে। এরপর তিনি বললেন, ‘কোনো বান্দা-

الْحَمْدَ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَر

‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’

অর্থ: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, আল্লাহ তাআলা অতি পবিত্র এবং আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, তিনি অতি মহান।’

لَتُسَاقِطُ مِنْ ذُنُوبِ الْعَبْدِ كَمَا تَسَاقَطَ وَرَقُ هَذِهِ الشَّجَرَةِ

বললে তা তার গুনাহগুসমূহ এরূপভাবে ঝরিয়ে দেয় যেভাবে এ গাছের পাতাসমূহ ঝরে পড়েছে।’ (তিরমিজি ৩৫৩৩, তালিকুর রাগিব)

ছোট্ট এ তাসবিহটি ১০০ বার পড়লেই পাওয়া যাবে এক হাজার নেকি। আবার এক হাজার অপরাধের গুনাহ থেকেও মিলবে মুক্তি। এমনকি বজ্রপাত থেকেও রক্ষা পাবে মানুষ। হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে-

হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গে উপস্থিত সাহাবাগণকে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কি এক হাজার নেকি অর্জন করতে অক্ষম? উপস্থিতদের একজন জানতে চাইলেন, আমাদের একজন কিভাবে এক হাজার নেকি অর্জন করবে? তিনি বললেন-

‘তোমাদের কেউ একশতবার তাসবিহ سُبْحَانَ الله (সুবহানাল্লাহ) পড়লেই তার আমালনামায় এক হাজার নেকি লিখে দেওয়া হবে এবং তার এক হাজার অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (তিরমিজি, মুসলিম)

শুধু তা-ই নয়

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌঁছে দেবেন। আর তাদের জানিয়ে দেবেন-

‘জান্নাতের জমিন অনেক সুঘ্রাণে সমৃদ্ধ। আর সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। জান্নাত একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হলো-

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’। (তিরমিজি, তালিকুর রাগিব)

হাদিসের বর্ণনায় মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার ছোট্ট এ আমলের রয়েছে অনেক ফজিলত ও তাৎপর্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য ছোট্ট এ তাসবিহ’র বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। যে তাসবিহতে রয়েছে, মহান আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা।

এটি বজ্রপাত থেকে হেফাজত থাকারও তাসবিহ

বজ্রের আক্রমণে মৃত্যু থেকে বাঁচতে ছোট্ট এ তাসবিহ পড়ার কথা এসেছে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসান্নেফে আবি শায়বায়। তাতে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ তাসবিহ পড়বে-

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ

উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।’

সে বজ্রপাতের আঘাত থেকে মুক্ত থাকবে। (মুসান্নেফে আবি শায়বায়)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ছোট্ট তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) প্রতিদিন ১০০ বার পড়ার তাওফিক দান করুন। এর বিনিময়ে এক হাজার নেকি পাওয়ার এবং এক হাজার অপরাধের গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। বজ্রপাতের অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতে মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সুদের ভয়াবহতা


ইসলামে সুদ খাওয়া হারাম। সুদ যেমন মারাত্মক অপরাধ তেমনি এর শাস্তিও মারাত্মক। মূলধনের অতিরিক্ত কোনো কিছু গ্রহণ করাই সুদ। সুদের গুনাহ এতই মারাত্মক যে, এর সর্বনিম্ন অপরাধটি হচ্ছে নিজ মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমান। (নাউজুবিল্লাহ)

মানব সমাজের জন্য সুদ এক ব্যাধি। সুদের আরবি পরিভাষা ‘রিবা’। এ সুদের অপরাধ ও শাস্তি কত মারাত্মক হতে পারে তা একটি হাদিস থেকেই অনুমান করা যায়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে। এর সর্বনিম্নটি হলো নিজ মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস)

সুদ খাওয়ার শাস্তি
ইসলামে সুদ খাওয়া হারাম। কোরআনে সুদ খাওয়াকে শুধু হারামই ঘোষণা করা হয়নি বরং সুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির অবস্থান কেমন হবে তা-ও উদাহরণসহ কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি; যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। এরপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

২. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩০)

৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৮)

৪. يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৬)

মনে রাখা জরুরি
শুধু সুদ খাওয়াই নয় বরং সুদ দেওয়া এবং সুদের লেনদেনে সাহায্য-সহযোগিতা করা, সবই হারাম এবং অভিশপ্ত কাজ। এ সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন- সুদখোর, সুদের হিসাব রক্ষক এবং তার সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি। তিনি আরও বলেছেন, (সুদের সঙ্গে জড়িত) তারা সবাই সমান অপরাধী।’ (বাইহাকি, মিশকাত)

যেহেতু সুদ ইসলামে হারাম এবং কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম। তাই সুদ থেকে বিরত থাকা মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক। সুদ থেকে বিরত থাকলে একদিকে যেমন হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা যাবে অন্যদিকে সুদের অপরাধ থেকেও মুক্ত থাকা যাবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদের মতো মারাত্মক হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ ও অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। সুদমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নারীকে যেসব উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম


নারী ও পুরুষ অধিকার নিশ্চিত করতে ইসলামের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান। নারীরা মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয় বহন করে। ইসলামই নারীকে দেয় সর্বোচ্চ মর্যাদা ও অধিকার। ইসলাম নারীকে যেসব উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো-

নারীর মর্যাদা

নারীরা একে অপরের সাহায্যকারী বন্ধু হওয়া, সৎকর্মশীল হওয়া, অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করা, বার্ষিক হজ পালন, জাকাত দেওয়াসহ ইবাদত-বন্দেগি পালন ও সামাজিক প্রায় সব কাজেই পুরুষের মতো নারীদের অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা বাধ্যতামূলক। এসব কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীরা তাদের নৈতিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে পারে এবং আল্লাহমুখী আধ্যাত্মিক চেতনা গড়ে তুলতে পারে। পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা বরেন-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

হে নবি! ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবি করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২)

কুরআন-সুন্নায় নারীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

সমাজে যখন নারীর অবস্থান ছিল অমানবিক; তখন থেকেই ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা উন্নয়নের জন্য নজীরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে নারী নির্যাতনের কিছু দিক তুলে ধরে তা প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো-

১. নারী সৃষ্টিতে সেরা

মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা দিয়েছৈ ইসলাম। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ অতীব সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ইসলাম জন্মগতভাবে মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। কেননা ইসলামের বিধিবিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য সমানভাবে শাশ্বত ও চিরন্তন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ

‘আর নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানদেরকে সম্মানিত করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)

এ আয়াত থেকে প্রমাণিত মানবিক সম্মান ও মর্যাদার বিচারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো নারীকে শুধু নারী হয়ে জন্মানোর কারণে পুরুষের তুলনায় হীন ও নীচ মনে করা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরাও মহান আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি।

২. ঈমান-আমলে নারীর মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমান-আমলে নারী-পুরুষের মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে বলে মনে করাও অজ্ঞতা। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে যে, মর্যাদা-লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব-নীচতার মাপকাঠি হচ্ছে- তাকওয়া তথা পরহেজগারী এবং চরিত্র ও নৈতিকতা। তাকওয়া ও চরিত্রের মাপকাঠীতে যে যতটা খাঁটি প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে সে ততটাই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

> مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِن فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَة وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ

‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক; আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব; যা তারা করত।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯৭)

> فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لاَ أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ

‘অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৫)

. সমাজ বিনির্মাণে নারী

জীবনের সবরকম কর্ম তৎপরতা ও উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সব সময় একে অপরকে সহযোগিতা করে থাকে। আল্লাহ তাআলা এক্ষেত্রেও উভয়কে সম মর্যাদা দান করেছেন। তাদের পারস্পরিক মিলে জীবনের কঠিন কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। উভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সভ্যতা ও তামাদ্দুনের ক্রমবিকাশ ঘটেছে। আল্লাহ বলেন-

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَـئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللّهُ إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭১)

. নারীকে দোষারোপ থেকে মুক্তি

গোটা দুনিয়া যখন নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো তখন ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ – أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَن يَشَاء عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তা ন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৪৯-৫০)

এ কারণে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমরা আমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রাণ খুলে মেলামেশা করতেও ভয় পেতাম; এ ভেবে যে, আমাদের সম্পর্কে কোনো আয়াত যেন  নাজিল না হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর আমরা প্রাণ খুলে তাদের সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম।’ (বুখারি)

. কন্যা সন্তান হত্যা রোধে পুরস্কারের ঘোষণা

জাহেলিয়াতের যুগে নারীর বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। ইসলামের ঘোষণা এলো এভাবে যে, না, তারাও জীবিত থাকবে এবং যে ব্যক্তিই তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে; মহান আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَإِذَا الْمَوْؤُودَةُ سُئِلَتْ – بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ

‘যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে- কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল?’ (সুরা তাকভির : আয়াত ৮-৯)

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানদের হত্যা প্রতিরোধে বিশেষ ঘোষণা দেন।  হাদিসে পাকে এসেছে-

> হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তির কন্যা সন্তান আছে, আর যে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি কিংবা তার সঙ্গে লাঞ্ছনাকর আচরণ করেনি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেয়নি; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’ (আবু দাউদ)

 > রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তিনটি কন্যা সন্তান লালন পালন করেছে, তাদেরকে উত্তম আচরণ শিখিয়েছে, বিয়ে দিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করেছে; সে জান্নাত লাভ করবে।’ (আবু দাউদ)

. নারীর প্রতি সদয় আচরণের নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা নারীর প্রতি কোমল ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ

‘নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের কাঁচের সঙ্গে তুলনা করতেন। তাদের প্রতি সদয় হওয়ার তাগিদ দিতেন। তিনি বলেন-

‘কাঁচগুলোকে (স্ত্রীদেরকে) একটু দেখে শুনে যত্নের সঙ্গে নিয়ে যাও।’ (মুসলিম)

আধুনিক সমাজেও নারীর প্রতিবন্ধকতা

আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার নামে নারীকে অগ্রসর ভাবা হলেও নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে; আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং বহু ক্ষেত্রে তারা নির্যাতিত। যেসব ক্ষেত্রে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা নারীর পাশে দাঁড়াতে পারেনি; যে কারণে নারীরা-

১. নিরাপদে ঘরতে বের হতে পারে না।

২. পাচারের শিকার হয়।

৩. জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়।

৪. অহরহ যৌন হয়রানির শিকার হয়।

৫. গর্ভবতী নারীও স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর ও ননদদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় না।

৬. যৌতুকের বলি হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

৭. স্বামী ও পিতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

৮. অধিকাংশ নারীই পায় না মোহরানার অধিকার।

৯. শিশুকন্যাদের ঝুঁকিপূর্ণ গৃহপরিচারিকার কাজে বাধ্য করা হয়।

১০. নারীদের শ্রমের সঠিক মূল্যয়ন করা হয় না।

১১. আধুনিক সভ্যতায় উচ্চ মর্যাদার নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১২. এমনকি ধর্মীয় অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় নারীকে।

১৩. তালাকের অপব্যবহার হয় অহরহ।

নারীর অধিকার আদায় নির্যাতন রোধে করণীয়

নারী এসব নির্যাতন রোধে ইসলামে কী বলে? ইসলাম নারীর শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করেছে। এমনকি ইসলামি শরিয়াতের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপারে পুরুষের মতো শ্রম-সাধনা করায় নারীর সমান অংশগ্রহণের অনুমতিও রয়েছে।

ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। যেখানে নারীরা তাদের মান মর্যাদা ও ইজ্জত-আব্রু হেফাজরে নিশ্চয়তাই পায় না বরং নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পায় সঠিক দিকনির্দেশনা। কুরআনুল কারিমের নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হলো-

১. নারীর নিরাপত্তায় উপদেশ

ইসলাম নারীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করেছে। রাস্তায়, কর্মস্থলে ও যত্রতত্র নারীদের হয়রানি করা তো দূরের কথা বরং ইসলাম নারীদের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি দিতেও কঠোর নির্দেশ দেয়। আল্লাহ বলেন-

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

‘হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।‘ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)

আর কেউ যেন নারীকে হয়রানি না করে সে জন্য নারীকে বোনের দৃষ্টিতে দেখার ঘোষণা দেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন-

إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَال

‘নারীরা পুরুষদের সহোদরা (বোন)।’ (আবু দাউদ)

২. ব্যভিচার-ধর্ষণ-অপবাদ রোধের ঘোষণা

ইসলাম ব্যভিচার, দেহব্যবসা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও দেহপ্রদর্শনীকে নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলামে নারীকে ধর্ষণ করা কিংবা ধর্ষণের চেষ্টা করা এবং নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার অত্যন্ত ভয়াবহ শাস্তি ঘোষণা করেছে। যাতে খারাপ চিত্তের পুরুষগণ এসব অবাঞ্ছিত কাজ থেকে বিরত থাকে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

> وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩২)

> وَلاَ تَقْرَبُواْ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ

‘আর তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার কাছাকাছি যেও না।।’ (সুরা আল-আনআম : আয়াত ১৫১)

> إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’ (সুরা নুর : আয়াত ১৯)

> إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকালে ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্যে রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ (সুরা নুর : আয়াত ২৩)

৩. নারীর অধিকার বাস্তবায়নের নির্দেশ

ইসলাম নারী দিয়েছে সম্পদের অধিকার। এ অধিকার আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। চাইলে যে কেউ নারীকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার করবে এমন অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন কোরআনুল কারিমের এ আয়াতে-

يُوصِيكُمُ اللّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنثَيَيْنِ فَإِن كُنَّ نِسَاء فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلأُمِّهِ السُّدُسُ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَآؤُكُمْ وَأَبناؤُكُمْ لاَ تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعاً فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيما حَكِيمًا

‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন, একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দুই-এর অধিক, তবে তাদের জন্য ওই মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের বাবা-মার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে রেখে যাওয়া সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের ছেলে থাকে। যদি ছেলে না থাকে এবং বাবা-মা ওয়ারিস হয়, তবে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। ওসিয়ত পূরণ করার পর; যা (ওসিয়ত) করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের বাবা ও ছেলের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১)

এ আয়াতে নারী ক্ষেত্র বিশেষ যেমন পুরুষের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে; আবার ক্ষেত্র বিশেষ নারীর সমান অর্ধেক সম্পত্তিও পাবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঘোষণা করেছে ইসলাম।

. মোহর দেওয়ার নির্দেশ

 নারীর মোহরানার অধিকার সম্পর্কেও ইসলাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

> يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ

হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদের আপনি মোহরানা প্রদান করেন।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫০)

> وَآتُواْ النَّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا

‘আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪)

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاء اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা (মোহর) ফরজ করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : ৫০)

. নারীর প্রতি নির্যাতন নয়

নারীকে যে কোন ছুঁতোয় দৈহিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে নির্যাতন করা ইসলামি শরীয়তে বৈধ নয়। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের জীবনে তার কোনো স্ত্রী  কিংবা কন্যার গায়ে হাত তোলেননি।

বাসা-বাড়ীতে কর্মরত কাজের মেয়ে কিবং বুয়ারাও ক্রীতদাসী নয়। ইসলামে ক্রীতদাস প্রথাবিলোপ করা হয়েছে। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাস-দাসীদের ব্যাপারে বিশেষ নসিহত পেশ করেছেন-

‘তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাস-দাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমাদের দাসদাসীদের ব্যাপারে সাবধান! তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে এবং তোমরা যা পরবে তাদেরকে তা পরতে দেবে।’ (মুসনাদ আহমাদ, আত-তাবাকাত আল-কুবরা)

৬. নারীকে অপবাদ দেওয়ার শাস্তি

ইসলামে নারীকে অপবাদ দেওয়া নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-

>  وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاء فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই নাফারমান।’ (সুরা নুর : আয়াত ৪)

৭. তালাকের অপব্যবহার রোধ

স্বামী-স্ত্রীর অস্বস্তিকর জীবনের সুন্দর সমাধানের জন্য ইসলাম তালাকের বিধান রেখেছে। স্বামীর হাতে যদিও তালাকে প্রাথমিক অধিকার ন্যস্ত হয়েছে, কিন্তু সে অধিকার অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করাও ইসলামি শরিয়তে আরেকটি অন্যায় ও গোনাহের কাজ হিসেবে বিবেচিত।

মনে রাখা জরুরি

বিয়ে যেভাবে সামাজিক সমঝোতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে ঠিক তেমনি তালাকও উভয়ের বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। এ ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা হলো এমন-

وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُواْ حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلاَحًا يُوَفِّقِ اللّهُ بَيْنَهُمَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا

‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৫)

অতঃপর করণীয় কী হবে? এ সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলা বলেন-

الطَّلاَقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلاَ يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُواْ مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلاَّ أَن يَخَافَا أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ يُقِيمَا حُدُودَ اللّهِ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللّهِ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

‘তালাকে-‘রাজঈ’ হলো- দুবার পর্যন্ত। তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর তাদের কাছ থেকে নিজের দেওয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেওয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না; অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোনো পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২৯)

৮. পরকালের জবাবদিহিতা

প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর প্রত্যেককেই তার কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সুতরাং যে বা যারা নারী নির্যাতন করে থাকে; তাদের এ কথা স্মরণ রাখা জরুরি যে, এ নির্যাতনের জন্য অবশ্যই তাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতে হবে। আর এ জবাবদিহিতাই মানুষকে নারী নির্যাতনসহ যে কোনো অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। জবাবদিহিতা থাকলে নারী-পুরুষ সবাই উত্তম চরিত্রের মুসলিমে পরিণত হবে ইন শা আল্লাহ।

মুসলিম উম্মাহর উচিত, নারী প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সব হক যথাযথভাবে আদায় করা। নারীকে মর্যাদা দেওয়া। নারীর মর্যাদা রক্ষায় কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে নারীর প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদায় ইসলামের বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বিশ্বজুড়ে সবাইকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকগুলো বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।

স্ত্রী-সন্তান-পরিবারের জন্য ব্যয় করা ইবাদত


ফার্সি গল্পের একটি চমৎকার ঘটনা। প্রতিদিন এক ব্যক্তি ছয়টা রুটি কিনতেন। একদিন দোকানির কৌতুহল হলো কেন তিনি প্রতিদিন ৬টি রুটি কিনেন? খরিদদারকে জিজ্ঞাসা করায় তার থেকে চমৎকার শিক্ষামূলক বক্তব্য বেরিয়ে আসে। কী সেই শিক্ষামূলক বক্তব্য?

খরিদদার বলেন, ‘দুটো দিয়ে দেনা শোধ দিই, দুটো ধার দিই, একটা ফেলে দিই, আরেকটি নিজে খাই।দোকানী যারপরনাই কৌতুহলী হয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন—দেনা শোধ দিই মানে বাবা-মাকে খাওয়াই, তারা একসময় আমাকে খাইয়েছে; ধার দিই মানে ছেলে-মেয়েকে খাওয়াই, ওরা বৃদ্ধ বয়সে ফেরত দেবে; ফেলে দিই মানে ওটা বৌকে খাওয়াই, সে আমাকে কোনো দিন খাওয়ায়নি আর কোনো দিন খাওয়াবেও না, আরেকটি তো নিজে খাই।

কেবল ‘আমল করা’ আর আল্লাহর জন্য ‘আমল করার মধ্যে অনেক তফাত আছে। যেমন ধরুন—পরিবারের সদস্যদের ব্যয়ভার বহন করা একটি কাজ। এটি কিন্তু ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই করে থাকে। আপনিও করেন। কিন্তু কেন করেন? উত্তর হতে পারে—’আরে ভাই এটা কোনো প্রশ্ন হলো না কি, আমার পরিবারের ব্যায়ভার আমি বহন করবে না তো কে করবে?’ কিংবা উত্তর হতে পারে উল্লিখিত গল্পের ব্যক্তির মতো। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু মাসউদ আল-বদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—নিঃসন্দেহে কোনো মুসলিম যখন তার পরিবারের জন্য খরচ করে তা সাদাকা হিসেবে গন্য হবে যদি সে তাকে (ইবাদাত) মনে করে।‘ (বুখারি ও মুসলিম)

কেনা-কাটায় পকেটের পয়সা সবারই যাবে, এতে কিন্তু কারোরই মাফ নেই। কিন্তু কারোটা নিছক খরচ হবে আর কারোটা ইবাদাত হিসেবে গৃহীত হবে—তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে নিয়তের উপর। নিয়ত যদি ঠিক থাকে তাহলে বৌয়ের রুটিটাও আর ফেলে দেওয়ার খাতায় উঠবে না।

আপনি যখন পরিবারের জন্য বাজার থেকে মাছ কিনেন, গোস্ত কিনেন, শাক-সবজি কিনেন, যখন তাদের জন্য জামা-কাপড় কিনে দেন, ডাক্তারের ফি দেন, ওষুধ কিনেন, পড়ালেখার জন্য খাতা-পেন্সিল কিনে আনেন—কখনো কি মনের মধ্যে ইবাদাতের অনুভুতি থাকে?

কখনো সচেতনভাবে অস্ফুট আওয়াজে ঠোট নাড়িয়ে কেবল আল্লাহকে শুনিয়ে বলেছেন—’ও আল্লাহ এই খরচ আমি কেবল তোমার সন্তুষ্টির জন্য করছি, তুমি কবুল করো’…?

হয়তো বলেন নি, হয়তো মনেই হয়নি, হয়তো ভেবেই দেখা হয়ে ওঠেনি এভাবে। পেছনে যতো পয়সা জলে গেছে—তা তো গেছেই। আজ থেকে আর নয়। আসুন, আমরা এক্ষুনি একটি সাধারণ নিয়ত করে নিই যে—পরিবারের ব্যয়ভার আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করবো।

আর সবসময় মনে না থাকলেও মাঝে মধ্যে কেনা-কাটার সময় সচেতনভাবে একটু বলি—

اِنَّمَا نُطۡعِمُکُمۡ لِوَجۡهِ اللّٰهِ لَا نُرِیۡدُ مِنۡکُمۡ جَزَآءً وَّ لَا شُکُوۡرًا

‘ইন্নামা নুতইমুকুম লিওয়াজহিল্লাহ, লা নুরিদু মিনকুম জাযাআন ওয়া লা শুকুরান’

‘আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদেরকে খাওয়াই; তোমাদের থেকে না এর কোনো প্রতিদান চাই, না কোনো কৃতজ্ঞতা চাই’…। (সুরা আল-ইনসান/দাহর : আয়াত ৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিটি কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

একটি বানোয়াট কিসসা: মেরাজে নবীজী ইসরাফীল আ.-কে সালাম দিলে ইসরাফীলের উত্তর না দেয়া


এক বক্তাকে বলতে শোনা গেল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে গিয়ে ইসরাফীল আ.-এর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। জিবরীল আ. তাঁকে ইসরাফীলের কাছে নিয়ে গেলে দেখলেন বিশাল শিঙ্গা মুখে নিয়ে ইসরাফীল আ. আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায়। নবীজী ইসরাফীলকে সালাম দিলেন, ইসরাফীল সালামের উত্তরও দিলেন না, কোনো কথাও বললেন না। তখন নবীজী বললেন, কী ব্যাপার, আপনি সালামের উত্তরও দিচ্ছেন না, কোনো কথাও বলছেন না!

তখন ইসরাফীল আ. বললেন, আমি যদি আপনার সালামের উত্তর দিতে যাই আর এ মুহূর্তে আল্লাহ শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার আদেশ দেন তাহলে আল্লাহর আদেশ পালন করতে আমার বিলম্ব হয়ে যাবে। (সালামের উত্তর দেওয়ার সময় পরিমাণ বিলম্ব হয়ে যাবে)

এরপর নবীজী তার কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন, আমি আখেরী নবী মুহাম্মাদ, আল্লাহর বন্ধু, আমাকে আল্লাহ তার কাছে মেহমান হিসেবে দাওয়াত দিয়েছেন, সুতরাং আপনি নিশ্চিত থাকুন, বন্ধুকে দাওয়াত দিয়ে এনে আল্লাহ কিয়ামত সংঘটিত করবেন না। একথা শুনে ইসরাফীল নিশ্চিন্ত হন…!

এটি একটি বানোয়াট কিসসা। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে তা পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে মেরাজের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে, কিন্তু কোথাও এজাতীয় কথা নেই।

আর এ ঘটনার মধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসরাফীল আ. স্বল্প সময়ে সালামের উত্তর দিচ্ছেন না, কিন্ত পরক্ষণেই এর চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে কারণ বাতলাচ্ছেন। এ কিসসা বাতিল ও বানোয়াট হওয়ার এটিও একটি দলীল।

একটি ভিত্তিহীন ধারণা: রমযান মাসে কি কবরের আযাব মাফ থাকে?


অনেক মানুষকেই বলতে শোনা যায়, ‘রমযান মাসে কবরের আযাব মাফ থাকে’। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়; কুরআন-হাদীসে এ বিষয়ে কিছু বর্ণিত হয়নি।

তেমনিভাবে কিছু মানুষকে একথাও বলতে শোনা যায় যে, ‘দাফনের পর জুমা বা রমযান এলে কিয়ামত পর্যন্ত কবরের আযাব মাফ হয়ে যায়!’ এ কথারও কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে (এপ্রিল ২০১২ ঈ.) আমরা এ বিভাগেই লিখেছি।

আল্লাহ সকলকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন! আসলে কবরের আযাব হওয়া না-হওয়ার সাথে রমযানের কোনো সম্পর্ক নেই; ব্যক্তির ঈমান ও নেক আমলের সাথে এর সম্পর্ক। ব্যক্তির উচিত ঐসকল আমল থেকে বিরত থাকা, যার কারণে কবরের আযাব হয় এবং সাথে সাথে ঐসকল আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যার মাধ্যমে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

তবে হাঁ, রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে তার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হুযায়ফা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

… وَمَنْ صَامَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنّةَ.

قال الهيثمي : رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصّحِيحِ غَيْرَ عُثْمَانَ بْنِ مُسْلِمٍ الْبَتِّيِّ وَهُوَ ثِقَةٌ.

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন রোযা রাখে এবং এ রোযা হয় তার জীবনের শেষ আমল (অর্থাৎ রোযাদার অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয়) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৩৩২৪; আলআসমা ওয়াস সিফাত, বায়হাকী, হাদীস ৬৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১১৯৩৫

অর্থাৎ রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে, আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু রমযান মাসে কবরের আযাব মাফ- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।

সম্ভবত একটি বিষয় থেকে মানুষের মাঝে এ ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। হাদীস শরীফে এসেছে-

إِذَا كَانَتْ أَوّلُ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ، صُفِّدَتِ الشّيَاطِينُ، وَمَرَدَةُ الْجِنِّ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النّارِ، فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ، وَفُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنّةِ، فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ، وَنَادَى مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلهِ عُتَقَاءُ مِنَ النّارِ، وَذَلِكَ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ.

যখন রমযানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, (সারা মাস) একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! আরো অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের যাত্রী! ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১৮৮৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৫৩২

এ বর্ণনার ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’- এখান থেকে হয়ত কারো মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, তাহলে রমযানে কবরের আযাবও বন্ধ থাকে।

যাইহোক, রমযানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে, প্রতি রাতে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং রোযাদার অবস্থায় ইন্তেকাল করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মাফ করে দেবেন এবং জান্নাতে দাখেল করবেন- এগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু রমযানে কবরের আযাব মাফ থাকে- এমন কোনো কথা পাওয়া যায় না।