রশ্ন ২: শরীয়তের দৃষ্টিতে “নাহী আনিল মুনকার” অর্থাৎ ! অসৎ কাজে বাধা প্রদান ফরজে কিফায়া এবং গুরুত্বপুর্ণ ইবাদত । কিন্তু তাবলীগের লোকেরা শুধু সৎ কাজের আদেশ দেয় । কখনও নাহী আনিল মুনকারের ব্যাপারে কিছু বলেন না বা বাতিলের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ বা জিহাদ কোনটাই শরীক হন না । তাদের এরূপ করা কি ঠিক?


লেখকঃ মুফতী মনসুরুল হক

উত্তরঃ “ তাবলীগের লোকেরা নাহী আনিল মুনকার তথা অসৎ কাজের নিষেধ করেন না ” এ কথাটি ঠিক নয় । কারণ, অনেক ক্ষেত্রে সৎ কাজের আদেশের মাধ্যমে অসৎ কাজের নিষেধও হয়ে যায় । যেমনঃ তারা নামায পড়ার জন্য মানুষকে দা‘ওয়াত দেন, উৎসাহ প্রদান করেন । যার ফলে বহু লোক নামাযী হয়ে যায় । এখন তাদের এই দা‘ওয়াতের মাধ্যমে নামায না পড়া যে “মুনকার” বা অন্যয় কাজ ছিল, হেকমতের সাথে সেই মুনকারের বাঁধা দেয়া হয়ে যায় । কোন প্রতিবাদ বা সংঘর্ষের প্রয়োজন হয় না । এই পদ্ধতিতে তারা অসংখ্য “নাহী আনিল মুনকার” করে থাকেন । এখন বাকী রইল এমন কতগুলো মুনকার-যা তাবলীগের দ্বারা তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করা যায় না অথচ সেটারও প্রতিবাদ-প্রতিরোধ মুসলমানদের জন্য ফরজে কিফায়া ।
তবে একথা ঠিক, তাবলীগের মাধ্যমে এই ফরজে কিফায়াটা করা সম্ভব হবে না। কারণ হল, এটা যেহেতু ফরজে কিফায়া, তাই তা সকলের জন্য করা জরুরী নয়। আর শুধু এক তাবলীগ পক্ষ থেকে সব ধরনের কাজ করাও সম্ভব নয়। মুসলমানদের রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যে কোন জামা‘আতের পক্ষ থেকে এটা করা যায়। তাতে সকলেই ফরজে কিফায়ার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। যেমনঃ মুরতাদ সালমান রুশদী, ডঃ আহমদ শরীফ ও তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মুসলমানরা প্রতিবাদ করেছে এবং করছে।
তাবলীগের মেহনতটা বিশ্বজুড়ে একটা নীরব আন্দোলন। এই আন্দোলন বাস্তবায়িত হলে, সে দিন মুসলমানদের মৌলিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । বিভিন্ন হেকমতের কারণে কিছু “নাহী আনিল মুনকার” তাবলীগের নামে করা সত্যই মুশকিল । তাতে ফরজে কিফায়া করতে গিয়ে তাদের অনেক জরুরী কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যেতে পারে । এই মজবুরীর কারণে তাবলীগের নামে এ জাতীয় খিদমত আঞ্জাম দেয়া যায় না। এ জন্য হযরত শাইখ যাকারিয়া (রহঃ) তাবলীগী জিম্মাদারদেরকে বলেতেন, তারা যেন সমাজের মুনকারাতের (অন্যায়-অপকর্মের) ব্যাপারে মাথা না ঘামান। বরং তারা যে কাজ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন, সেই কাজ নিয়েই যেন চলতে থাকেন । অতঃপর তিনি হযরত থানবী (রহঃ)-এর উদ্বৃতি দিয়ে বলেন যে. হযরত থানবী (রহঃ) বলতেন : (বিশ্বব্যাপী কাজের স্বার্থে) তারা যখন মুনকারাতের ব্যাপারে প্রতিবাদ না করার উসূল বানিয়েছেন, তো তাদের সেই উসূলের উপর থাকা উচিৎ। (মালফুজাতে শাইখ (রহঃ)- ২৮)
বাস্তবিকপক্ষে অনেক সময় এমন ঘটে যে, অনেক কাজ এক সাথে করতে গেলে কোনটাই সুন্দরভাবে সম্ভব হয় না। বরং সবটাই অসুন্দর হয়ে যায় , বা সম্পূর্ণটা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে । এর কারণে শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে বিশেষ বিশেষ সাবজেক্টের ভিত্তিতে বড় বড় মাদ্রাসা কলেজ ভার্সিটিগুলোকে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবগুলো সাবজেক্ট রাখা হয় না । (এটা শুধু উদহারণ স্বরূপ বলা হল ।)

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান